স্মার্ট পদ্ধতিতে চাষকৃত ফসলের মধ্যে ,স্মার্টনেসের সবটুকুই ঢেলে দিতে হয় গ্রীষ্মকালীন টমেটো বা গ্রাফটিং টমেটো চাষে । কারন এটি যতটা লাভজনক ঠিক ততটাই ঝুকিপূর্ণ । তাই গ্রাফটিং টমেটো চাষে প্রতিটা পদক্ষেপেই বিশেষ সতর্কতা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিচর্যা করতে হবে ।

টমেটো সচারচর শীতকালে চাষ করা হয় । তবে গ্রীষ্মকালীন জাত ব্যবহার করে বা টমেটোর গ্রাফটিং চারা ব্যবহার করে অমৌসুমেও টমেটো চাষ করা যায়।

অমৌসুমে টমেটো চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে । গ্রাফটিং করা  টমেটো সাধারনত ৮-৯ মাস পর্যন্ত ফলন দেয় । গ্রাফটিং টমেটো চাষের বিশেষ পরিচর্যাসহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে এই হ্যান্ডনোটে ।

গ্রাফটিং পদ্ধতিঃ একই পরিবার অথবা নিকটস্থ পরিবারের তুলনামূলক দুটি ভিন্ন ভিন্ন দুর্বল ও সবল জাতের কৃত্রিম সংযোজনই সাধারনত গ্রাফটিং। টমেটোর সাথে সাধারনত তীতবেগুন বা বনবেগুনের গ্রাফটিং করা হয়ে থাকে ।

খোলা মাঠের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে গ্রাফটিং টমেটোর চারা সবথেকে কার্যকরী ও উপযোগী । গ্রাফটিং টমেটো খোলা মাঠে এবং পলিশেডে দুই ভাবেই করা যায় ।

নন–গ্রাফটিং পদ্ধতিঃ গ্রাফটিং ছাড়াও নন গ্রাফটিং পদ্ধতিতে অমৌসুমী পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা যায় । সেক্ষেত্রে টমেটোর গ্রীষ্মকালীন ভালো জাতগুলো নির্বাচন করতে  হবে এবং অবশ্যই পলিশেড ব্যবহার করতে হবে । পলিশেডে চাষের ক্ষেত্রে স্থায়ী পলিশেড হতে পারে আবার অস্থায়ী পলিশেডও হতে পারে ।

তবে যেসব স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তার মূলধনের পরিমাণ কম অথবা দীর্ঘমেয়াদিভাবে চাষ করার  আগ্রহ কম তাদের ক্ষেত্রে অস্থায়ী পলিশেড তৈরি করে নন গ্রাফটিং টমেটো চাষ করতে পারে ।

গ্রাফটিং টমেটোর  চারা রোপনের সময়কাল:

• পলিহাউজঃ এপ্রিল – মে
• খোলা মাঠেঃ  জুন – জুলাই

গ্রাফটিং করার পদ্ধতি:

টমেটোকে সাধারনত  তীতবেগুনের সাথে গ্রাফটিং করতে হয় । রুটস্টক বা গোড়া হিসেবে তীতবেগুনের চারার গোড়ার অংশ এবং সায়ন  হিসেবে গ্রীষ্মাকালীন টমেটোর জাতের পাতাসহ উপরের কান্ডের অংশ কেটে নিয়ে দুটোকে একত্র করে যুক্ত করতে হবে ।  রটস্টকে ৩-৪ ইঞ্চি পরিমাণ কান্ড অবশিষ্ট রাখতে হয় এবং সায়নের দৈর্ঘ্য ৫-৬ ইঞ্চি রাখতে হবে ।

রুটসটককে মাঝ বরাবর ২-৩ সেন্টিমিটার গভীর করে ধাড়ালো ব্লেড দিয়ে কেটে নিতে হবে  । সায়ন হিসবে কেটে নেয়া ডগার অংশের কান্ডের গোড়াটি তেছড়ে করে কেটে নিতে হবে । অতঃপর সায়নকে রুটস্টোকের মাঝে  প্রতিস্থাপন করতে হবে এবং গ্রাফটিং ক্লিপ বা পলি দিয়ে বেধে ফেলতে হবে ।

পলি বাধার সময় খেয়াল রাখতে হবে ভিতরে বাতাস যেনো প্রবেশ না করে এবং দুই কান্ডের সংযোগস্থলে কোনো ফাকা অংশ বিদ্যমান না থাকে ।  গ্রাফটিং সম্পন্ন হয়ে গেলে চারাগাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে ।

টমেটোর গ্রাফটিং সবসময় শীতল আবহাওয়া ও ছায়াযুক্ত পরিষ্কার পরিছন্ন স্থানে করা উচিত । গ্রাফটিং -এ  ব্যবহৃত উপকরন  জীবানুনাশক দিয়ে জীবানুমুক্তকরে নিতে হবে  ।

গ্রাফটিং করা হয়ে গেলে চারাগুলো অবশয়ই ছায়াযুক্ত শীতল  স্থানে রাখতে হবে ।  এর পর ১৫ – ২০ দিনের মধ্য চারা তৈরী হয়ে গেলে চারা মূল জমিতে রোপন করে দিতে হবে । চারা জমিতে লেগে উঠলেই গ্রাফটিং নিচের পলিথিন অতি সাবধানতার সাথে কেটে ফেলতে হবে ।

জমি নির্বাচন ও চাষ পদ্ধতি:

দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি ছাড়া অমৌসুমে টমেটো চাষ ঝুকিপূর্ণ । তাই প্রজেক্ট শুরু করার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে জমির মাটি দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ কি না ।

জমি নির্বাচন করার পর প্রয়োজন অনুযায়ী চাষ দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে।  বেড তৈরীর সময় সার সুপারিশে অনুমোদিত সারের মধ্যে থাকা ফুরাডান অর্থাৎ কার্বোফুরান বিঘাপ্রতি ২ কেজির স্থলে ৩ কেজি প্রয়োগ করতে হবে ।

পলিশেড ও পলিহাউজে অমৌসুমী টমেটো চাষ:

স্থায়ী এবং অস্থায়ী দুইধরনের পলিহাউজেই গ্রীষ্মকালীন টমেটো বা গ্রাফটিং টমেটো চাষ করা যায় । এক্ষেত্রে গ্রাফটিং বিহিন চারাও রোপন করা যায় ।

অস্থায়ী পলিহাউজ তৈরি ও বেড তৈরি:

বেড তৈরি ও চারা রোপনঃ

৩ ফুট প্রস্থের বেড তৈরি করে ১২ ইঞ্চি পর পর চারা রোপন করতে হবে  । ১.৫ – ২  ফুট প্রস্থের বেড এবং লাইন থেকে লাইনের দূরুত্ব ২৪-২৬ ইঞ্চি হবে । দুটি শেডের মাঝখানে ২ ফুট ফাকা রাখতে হব।

খোলা মাঠে চাষের ক্ষেত্রেও উক্ত বেড সাইজ ও চারা রোপন দূরুত্ব এখই থাকবে । পলি শেডে ৪.৫ মাইক্রন পুরুত্বের দেশী পলি ব্যবহার করলেই হবে । যা প্রতি ৩ মাস পর পরিবর্তন যোগ্য।

স্প্রে শিডিউলের পাশাপাশি  নিম্নোক্ত ঔষধ গুলো প্রয়োগ করতে হবে

• গাছে ফুল আসা শুরু হলে ১ দিন পর পর ‘‘জোয়ার’’ প্রতি লিটার পানিতে ১৫/২০ মিলি হারে মিশিয়ে হ্যান্ডস্প্রে দিয়ে শুধুমাত্র ফুলে স্প্রে করতে হবে ।
• স্প্রেটি অবশ্যই ভোরে অথবা খুব সকালে (সকাল ৭ টার মধ্যেই) করতে হবে।
• ফলের গুটি আসার পর থেকে প্রতি ৭/৮ দিন পর পর ‘‘ কপ্লেসাল (২.৫ মিলি / লিটার) + বোরন (২ গ্রাম / লিটার)’’ প্রয়োগ করতে হবে ।
• উইল্টিং রোধে সপ্তাহে একবার ছত্রাকনাশোক পানিতে মিশে নিয়ে গাছের গোড়ায় ঢেলে দিতে হবে ।
• যেকোনো ধরনের সমস্যা বুঝতে অসুবিধা হলে এগ্রো-১ ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে পরামর্শ নিতে হবে ।

গ্রাফটিং টমেটো চাষ করবো নাকি নন গ্রাফটিং

গ্রাফটিং এর তুলনায় নন গ্রাফটিং টমেটোর চারা বেশী শক্তিশালি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও ফলনেও ভালো । এছাড়াও আবহাওয়ার প্রতিকূলতা সহ্য করার ক্ষমতাও বেশী  ।

কিন্তু স্থায়ী বা অস্থায়ী পলিহাউজে চাষ করলে গ্রাফটিং ছাড়াই  চাষ করা যায় ।

উপরে আলোচিত আনুমানিক হিসাবে দেখা যাচ্ছিলো খোলা মাঠে গ্রাফটিং এবং  নন গ্রাফটিং টমেটো চাষের খরচ প্রায় একই ।
বর্তমান আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দূর্যোগপূর্ণ জলবায়ূতে খোলা মাঠে অমৌসুমী টমেটো চাষ একটু ঝুকিপূর্ণই বটে ।  অস্থায়ী পলি শেড এবং খোলা মাঠে যেহেতু  প্রায় একই  খরচই পড়ে যায় তাই সবথেকে ভালো হবে অস্থায়ী পলি শেড তৈরি করে সেখানে নন গ্রাফটিং টমেটো চাষ করা ।

এতে গাছের জীবনকালও বেশী হবে এবং ঝড় বৃষ্টি থেকেও গাছকে রক্ষা করতে পারবে । এতে উৎপাদনের ঝুকি কমবে এবং ভালো ফলন পাওয়ার  সম্ভাবনা বেড়ে যাবে ।

যেসব উদ্যোক্তা স্থায়ী ভাবে বিনিয়োগ করতে চান তারা স্থায়ী পলি হাউজ তৈরি করে সেখানে টমেটোসহ সারা বছর ব্যাপী উচ্চ মূল্যের ফসল চাষ করতে পারেন ।  যেমন , ক্যাপসিকাম , তরমুজ , রকমেলন , লেটুস ইত্যাদি ।